বাউবি এইচ এস সি প্রোগ্রাম ২০২৩ ইং
       বাংলা
২য় পত্র
১। প্রশ্নঃ ব্যাকরণ বলতে কী বোঝেন? ব্যাকরণ পাঠের
প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করুন।
উত্তরঃ ব্যাকরণের সংজ্ঞা:- ব্যাকরণ হলো ভাষা ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত বিধির সমষ্টি যা
ভাষার ধ্বনি ব্যবস্থা, শব্দ তথা রূপের গঠন, বাহ্যিক বিন্যাস এবং বাগর্থকে বর্ণনা করে।
যে শাস্ত্র কোন ভাষাকে বিশ্লেষণ করে উহার প্রয়োগবিধি বুঝিয়ে দেয় এবং যা আয়ত্ত করলে
ভাষা শুদ্ধরূপে লিখতে, পড়তে, বলতে বা বুঝাতে পারা যায়, সেই শাস্ত্রকে ব্যাকরণ বলে।
ব্যাকরণ পামের প্রয়োজনীয়তা:- ভাষা শিখনে ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। একটি ভাষা
যথাযথভাবে শিখতে হলে একজন ভাষীর চারটি দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এগুলো হলো- কথন, পঠন,
লেখন ও শ্রবণ। বাংলা ভাষা বাংলাদেশের অধিকাংশ অধিবাসীর মাতৃভাষা হওয়ায় কথন (যা অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই আঞ্চলিক ভাষায় কথন) ও শ্রবণ দক্ষতা একজন শিশু তার চারপাশের পরিবেশ থেকেই
অর্জন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু লেখন ও পঠন দক্ষতা এবং প্রমিত বাংলায় কথন দক্ষতা অর্জনের
জন্য বাঙালি শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে এমন অনেক অধিবাসী
আছে যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়; তাদের বাংলা ভাষা শেখার উল্লিখিত চারটি দক্ষতাই আনুষ্ঠানিক
পরিবেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সূত্রে অর্জন করতে হয়। এই প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা আয়ত্ত করার
ক্ষেত্রে ব্যাকরণ পাঠের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ব্যাকরণ যথাযথভাবে অধ্যয়ন করতে
সক্ষম হলে শিক্ষার্থীরা প্রমিত বাংলা উচ্চরণে কথা বলতে শিখবে; ব্যাকরণের নিয়মসমূহ আয়ত্ত
করার ফলে তাদের পঠন যথার্থ হবে; তারা নির্ভুলভাবে বাংলা ভাষা শিখতে পারবে এবং বাংলা
ভাষা শুনে বুঝতে পারবে।
২। প্রশ্নঃ বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে
আলোচনা করুন?
উত্তরঃ ইন্দো-ইউরোপীয়
ভাষাবংশের প্রাচ্য শাখার অন্তর্গত একটি ভাষা হলো বাংলা। এই ভাষাবংশ শ্রিষ্টপূর্ব প্রায়
আড়াই হাজার বছর আগে ইউরোপ, এশিয়ার ইরান ও ভারতের বিস্তৃত অঞ্চলে বিকাশ লাভ করে। এই
ভাষাগোষ্ঠীর মূল আবাসভূমি ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কৃষ্ণসাগরের নিকটবর্তী উত্তরে
দানিয়ুব নদীর মুখ থেকে কাস্পিয়ান সাগরের অঞ্চলবর্তী ভূখণ্ডে। পরবর্তীকালে জনসংখ্যা
বৃদ্ধির কারণে মূল অঞ্চল থেকে ভাষা ব্যবহারকারীরা ইউরোপের পশ্চিম অঞ্চলে ক্রমশ অগ্রসর
হয়ে একটি দল প্রথমে ইরানে প্রবেশের পর সেখান থেকে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে
প্রবেশ করে। তারা ভারতের উত্তরাঞ্চলে বসবাসের পর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন সময়ে
ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এরাই ভারতবর্ষে আর্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এদের
ব্যবহৃত ভাষার প্রভাবেই নব্যভারতীয় আর্যভাষার অন্তর্গত একটি ভাষারূপে খ্রিষ্ট্রীয় ৭ম
থেকে ৯ম শতকে বাংলা উদ্ভূত ও বিকাশিত হয়। বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে সংস্কৃত ভাষার ব্যাপক
প্রভাব থাকলেও এর ব্যাকরণ এবং প্রয়োগবিধি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজস্ব পথ অনুসারী। আধুনিক
কালের প্রেক্ষাপটে বলা চলে যে, বিভিন্ন শব্দের ব্যুৎপত্তিগত কারণে এবং এদের বানানরীতি
অনুসরণের ক্ষেত্রে সংস্কৃত ভাষার নির্দেশনা বাংলা ভাষায় অনুসৃত হলেও বাংলা ভাষার উদ্ভবে
সংস্কৃত ভাষার প্রত্যক্ষ কোনো ভূমিকা যেমন নেই তেমনি সরাসরি কোনো প্রভাবও নেই। লক্ষ্য
করলে দেখা যায় যে, ভাষার বৈশিষ্ট্য অনুসরণের ক্ষেত্রে অন্যান্য নব্য ভারতীয় আর্যভাষা
যেমন- হিন্দি, মারাঠি কিংবা গুজরাটি যে মাত্রায় সংস্কৃত ভাষার রূপরীতি মেনে চলে তার
তুলনায় বাংলা ভাষা অনেক বেশি স্বাধীনতা নিয়েই তার আদি-মধ্যস্তর অতিক্রম করে আধুনিক
স্তরে উপনীত হয়েছে।
৩। প্রশ্নঃ ধ্বনি কাকে বলে? ধ্বনির প্রকারভেদ আলোচনা
করুন।
উত্তরঃ ধ্বনির সংজ্ঞা:- মানুষ যখন কথা বলে তখন আসলে সে অনেকগুলো ধ্বনি উচ্চারণ করে।
ইংরেজি sound-এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ধ্বনি। মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ রাখতে
হলে তার প্রধান উপায় কথা বলা, আওয়াজ করা। যে কোনো ভাষার উচ্চারিত যে কোনো আওয়াজকে সাধারণত
ধ্বনি বলা হয়। অর্থ প্রকাশ করে এমন ধ্বনিগুলোই মানুষের বিভিন্ন ভাষার বাগধ্বনি। মানুষের
কণ্ঠনিঃসৃত বা কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত আওয়াজকেই ধ্বনি বলা হয়।
* ধ্বনির প্রকারভেদ:- ধ্বনি দুই প্রকার- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
·       
স্বরধ্বনি:- যেসব ধ্বনি উচ্চারণে
মুখবিবরে, জিহ্বায় বা ঠোঁটে কোনো প্রকার শ্রতিগ্রাহ্য বাধা সৃষ্টি হয় না সেগুলোকে স্বরধ্বনি
বলা হয়। অর্থাৎ জিহ্বা বা ঠোঁটের সঙ্গে কোনোরূপ স্পর্শ ছাড়া ঘোষবৎ বা গম্ভীর হয়ে উচ্চরিত
হয় এই স্বরধ্বনি।
·       
ব্যঞ্জনধ্বনি:- যেসব ধ্বনি স্বরধ্বনি
নয় সেগুলোকে সাধারণভাবে ব্যঞ্চনধ্বনি বলা যেতে পারে। ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে মুখবিবরে
বা ঠোঁটে জিহ্বার সাহায্যে বাধার সৃষ্টি হয়।
৪। প্রশ্নঃ সন্ধি কাকে বলে? সন্ধির প্রয়োজনীয়তা লিখুন।
উত্তরঃ
সন্ধির সংজ্ঞা:- ‘সন্ধি’
শব্দের অর্থ মিলন বা সংযোগ। পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলা হয়। খুব
কাছাকাছি দুটি ধ্বনি দ্রুত উচ্চারণের ফলে কখনো একটি ধ্বনিতে পরিণত হয়, কখনো একটি ধ্বনির
লোপ হয় বা একটি রূপান্তর হয় এবং কখনো বা দুটি ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়ে নতুন ধ্বনি তৈরি
করে। যেমন- রবি+ইন্দ্র=রবীন্দ্র, হিম+আলয়=হিমালয়, ও চিৎ+ময়=চিন্ময়
ওপরের উদাহরণে পাশাপাশি দুটি শব্দ বসে সন্ধি হয়েছে।
* সন্ধির
প্রয়োজনীয়তা:- সন্ধির
প্রয়োজন বহুবিধ। যেমন:-
১। ধ্বনি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সন্ধি বিশেষ ভূমিকা
পালন করে।
২। নতুন শব্দ গঠনের জন্য সন্ধির প্রয়োজন হয়।
৩। শব্দের আকার ছোট করতেও সন্ধির প্রয়োজন পড়ে।
৪। সন্ধির ফলে ভাষা সুন্দর ও সাবলীল হয়।
৫। উচ্চারণ সহজ করার জন্য সন্ধির প্রয়োজন রয়েছে।
৬। উচ্চারণের সৌন্দর্য ও শ্রুতিমাধুর্য বৃদ্ধি,
ভাষার সৃষ্টি ও ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করতে সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৫। প্রশ্নঃ
সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা কাকে বলে?
উত্তরঃ-
সাধু ভাষারীতি:- বাংলা
ভাষায় সাধু ভাষা বা সাধুরীতির জন্ম বা আবির্ভাব হয় ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের সময়কালে। এই
ভাষা পরিচিত হয়ে উঠতে দীর্ঘদীন সময় লেগেছে। ঈশ্চরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রথম এই বিষয় নিয়ে
কাজ করেন। তাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা ভাষায় সাধুভাষার জনক বলা হয়। যে বাষারীতিতে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংস্কৃত ভাষাকে অনুসরণ করে ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ পূর্ণরূপে থাকে
এবং যার শব্দগুলি সন্ধিবদ্ধ ও সমাসবদ্ধভাবে তাকে তাকেই সাধুভাষা বা সাধুরীতি বলা হয়।
** ডক্টর সুনীতি
কুমার চট্টোপাধ্যায় সাধু ভাষার সংজ্ঞা হিসেবে বলেছেন, সাধারণত গদ্য সাহিত্য ব্যবহৃত
বাংলা ভাষাকে সাধু ভাষা বলে।
চলিত ভাষারীতি:-
বাংলা
ভাষাকে সবধরনের কৃত্রিমতা থেকে মুক্ত করার লক্ষই ছিল চলিত ভাষা সৃষ্টির মূল প্রেরণা।
১৯১৪ খ্রি: দিকে প্রথমে চলিত ভাষার সৃষ্টি হয়। চলিত ভাষা সাধু ভাষার তুলনায় অনেক পরে
এসেছে তাই এটা নবীন বা নতুন। চলিত ভাষা হলো মানুষের জবিন ঘণিষ্ঠ ভাষা। সাধারণভাবে বলতে
যে ভাষা আমরা দৈনন্দিন জীবনে কথা বলতে ব্যবহার করে থাকি তাকেই চলিত ভাষা বা চলিতরীতি
বলা হয়।
অর্থাৎ যে ভাষায় ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদগুলো ছোট
হয় সন্ধি ও সমাস যুক্তপদ খুবই কম থাকে তাকে চলিত ভাষা বলে।
৬। প্রশ্নঃ সাধুরীতি ও চলতিরীতির মধ্যে পার্থক্য লিখুন।
উত্তরঃ সাধু ও চলতি ভাষারীতির মধ্যকার
পার্থক্যগুলো হলো-
| সাধু ভাষারীতি | চলতি ভাষারীতি | 
| ১। সাধু ভাষারীতি প্রাচীন
  ও পুরনো বৈশিষ্ট্যের অনুসারী। | ১। চলতি ভাষারীতি আধুনিক
  ও নতুন বৈশিষ্ট্যের অনুসারী। | 
| ২। সাধু ভাষার রীতি ব্যাকরণের
  নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। | ২। চলতি ভাষারীতি ব্যাকরণের
  সকল নিয়ম দ্বারা সমান নিয়ন্ত্রিত নয়। | 
| ৩। সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের
  পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয় সাধু ভাষারীতিতে। যেমন- তাহারা, করিয়া প্রভৃতি। | ৩। চলতি ভাষারীতিতে সর্বনাম
  ও ক্রিয়াপদের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয় না। যেমন- তারা, করে প্রভৃতি। | 
| ৪। সাধু ভাষারীতিতে তৎসম
  শব্দের প্রয়োগ বেশি। | ৪। চলতি ভাষায় তদ্ভব, দেশি,
  বিদেশি শব্দের প্রয়োগ বেশি। | 
| ৫। সাধু ভাষারীতি নির্দিষ্ট
  ও অপরিবর্তনীয় | ৫। চলতি ভাষারীতি পরিবর্তনশীল। | 
| ৬। সাধু ভাষারীতি সংলাপ,
  বক্তৃতা ও নাটকের উপযোগী নয়। | ৬। চলতি ভাষারীতি বক্তৃতা,
  নাটক ও সংলাপের জন্য উপযোগী। | 
| ৭। সাধু ভাষায় ধ্বন্যাত্মক
  শব্দের প্রাধান্য নেই। | ৭। চলতি ভাষার ধ্বন্যাত্নক
  শব্দের ব্যবহার ও প্রাধান্য রয়েছে। যেমন- টুকটুক, ভনভন, হনহন ইত্যাদি। | 
| ৮। সাধু ভাষায় অনুসর্গের
  পূর্ণাঙ্গ রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন- হইতে, নিকট, দিয়া ইত্যাদি। | ৮। চলতি ভাষারীতিতে অনুসর্গের
  পূর্ণাঙ্গ রূপ ব্যবহৃত হয় না। যেমন- হতে, কাছে, দিয়ে ইত্যাদি। | 
৭। প্রশ্নঃ প্রমিত উচ্চারণ বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ উচ্চারণ একটি বাচনিক প্রক্রিয়া।
মান্য বা প্রমিত উচ্চারণ বলতে সাধারণ কথাবার্তায় ব্যবহৃত আঞ্চলিকতামুক্ত উচ্চারণকে
বুঝায়। মান্য উচ্চারণ সবসময় বানানকে অনুসরণ করে না। প্রায়ই তা অর্থকেও অনুসরণ করে না।
মান্য উচ্চারণে ধ্বনিতাত্ত্বিক কারণটিই প্রধান। ‘অনন্ত’ শব্দের বানান অনুযায়ী উচ্চারণ
হওয়া উচিত অন্নত। কিন্তু আমরা মান্য উচ্চারণ করি-অনোন্তো। এর কারণটি ধ্বনিতাত্ত্বিক।
প্রথম সিলেবল বা অক্ষরে ঝোঁক পড়ার জন্য দ্বিতীয় অক্ষরের নিহিত অ ধ্বনি ও ধ্বনিতে পরিণত
হয়েছে।
আবৃত্তিতে, সাহিত্য-সংস্কৃতি
বিষয়ক ভাষণে কিংবা নাটকের সংলাপে এক ধরনের পরিশীলিত উচ্চারণ দেখা যায়। এই পরিশীলিত
উচ্চারণকে বলা হয় ফরমাল বা আনুষ্ঠানিক উচ্চারণ। এই আনুষ্ঠানিক উচ্চারণ প্রমিত বা মান্য
উচ্চারণ থেকে আলাদা।
